Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

#গল্পঃ ডি‌প্রেশন ট‌্যাবলেট

#গল্পঃ ডি‌প্রেশন ট‌্যাবলেট

পর্ব-১

বহুকাল আ‌গে ফ‌কিন্নী পাড়া নামক এক পাড়ায় এক‌টি মে‌য়ে তার প‌রিবা‌রের সা‌থে বসবাস কর‌তো। মে‌য়ে‌টির নাম
ডি‌প্রেশন Depression

ডি‌প্রেশন(Depression)


বহুকাল আ‌গে ফ‌কিন্নী পাড়া নামক এক পাড়ায় এক‌টি মে‌য়ে তার প‌রিবা‌রের সা‌থে বসবাস কর‌তো। মে‌য়ে‌টির নাম নীলু। মে‌য়ে‌টি প‌রিবা‌রের বড় মে‌য়ে। তার এক‌টি ছোট বোন ছিল। নাম ক‌নি। নীলু বড় হওয়ার সা‌থে সা‌থে প‌রিবা‌রের হাল ধর‌তে শুরু ক‌রে। পাড়ার বা‌কি পাঁচটা মে‌য়ের চে‌য়ে নিলু আলাদা। ত‌বে বা‌কি মে‌য়ে‌দের সা‌থে নীলুর মিল ছিল স্ব‌প্নে। নীলু বা‌কি মে‌য়ে‌দের মত সুন্দর একটা জীব‌নের স্বপ্ন দেখত। স্বপ্ন দেখত স্বামী সন্তান নি‌য়ে সুন্দর এক‌টি সংসা‌রের। সেও চাই‌তো কা‌রো হাত ধ‌রে সারাজীবন পার ক‌রে দি‌তে। কিন্তু এইসবতো শুধু স্ব‌প্নে হয়। নীলু জান‌তো। কিন্তু স্বপ্ন দেখ‌তে‌তো টাকা লা‌গে না। স্বপ্ন ফ্রিতে দেখা যায়। শুধু দরকার প্রচুর ই‌মো‌শোনাল মু‌ভি দেখা অথবা সারা‌দিন স্বামীর আদর, স্বামীর সা‌থে খুনছ‌টি, স্বামীর কেন্দ্রীক ই‌মোশনাল চিন্তা ভাবনার কার‌নে এইরুপ স্ব‌প্নের উদয় হয়। এ‌দের উ‌চিত ২৪ ঘন্টা হরর মু‌ভি দেখা‌নো উ‌চিত। তখন আর এই সব স্বপ্ন থাক‌বে না। যাই হোক। নীলুর নি‌জের প্রতি আত্ন‌বিশ্বাস ছিল। নীলু চাক‌রি কর‌তো । বয়স একটু কম থাকায় অ‌তি মাত্রায় হয়রা‌নি শিকার হ‌তে হতো সব জায়গায়। সব বাধা পে‌রি‌য়ে নীলু চাক‌রি কর‌তো। কারন তার আর কোন পথ নেই। সংসারের হাল তা‌কে ধর‌তে হ‌য়েছে। খুব অল্প বয়‌সে হাল ধর‌তে গি‌য়ে পড়া‌লেখা আর হ‌লো না। কিন্তু নীলু চাই‌তো তার ছোট বোন পড়াশুনা করুক। অ‌নেক বড় হোক। সে ক‌নি কে খুব উৎসাহ দিত। সব সময় সাহস দিত। স্বপ্ন দেখত ক‌নি অ‌নেক বড় হ‌বে। নীলুর বাবা দিন মজুর। বয়স চল‌ছে ৬৬। আ‌গের মত এখন তেমন একট‌া প‌রিশ্রম কর‌তে পা‌রে না। সারা‌দি‌নে যা টুকটাক ক‌রে দু চার‌টে টাকা ইনকাম ক‌রে তাই নি‌য়ে ঘ‌রে আ‌সে। নীলু কাজ ক‌রে একটা টেইর্লাস এ কা‌রিগর হি‌সে‌বে। কাজ শেষ ক‌রে বি‌কে‌লে ঘ‌রে ফির‌ছি‌লো। রাস্তা পার হ‌বে দা‌ড়ি‌য়ে আ‌ছে। হঠ‌্যাৎ চো‌খে পড়‌লো রাস্তার অপর পা‌শে একটা ছেলে দা‌ড়ি‌য়ে। ছে‌লেটা নিরন্তর দৃ‌ষ্টি‌তে তা‌কি‌য়ে আ‌ছে। রাস্তা ক্লিয়ার হ‌লে নীলু রাস্তা পার হ‌য়ে বা‌ড়ির দি‌কে হে‌টে চল‌লো।

#গল্পঃ
ডি‌প্রেশন টেব‌লেট

পর্ব=২

রাস্তা ক্লিয়ার হ‌লে নীলু রাস্তা পার হ‌য়ে পার হ‌য়ে বা‌ড়ির দি‌কে হে‌টে চল‌লো। কিছুক্ষন পর নীলু অনুভব কর‌লো কেউ একজন তার পেছন পেছন আস‌ছে। সে আশপাশ না দে‌খে দ্রুত হাটা শুরু কর‌লো। বাসায় ফি‌রে ‌ফ্রেশ হ‌য়ে ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় লে‌লি‌য়ে দি‌য়ে অজ্ঞান হ‌য়ে গেল। প্রচন্ড ক্লান্ত থাকায় কখন যে তন্দ্রাচ্ছন্ন হ‌লো টের ও পেলনা। ঘুম থে‌কে উ‌ঠে চোখ মুছ‌তে মুছ‌তে চলে গেল রান্না ঘ‌রে। নীলুর মা‌ বৃদ্ধা ম‌হিলা। চো‌খে দেখ‌তে পায় না। বছর তি‌নেক আ‌গে চো‌খে ছা‌নি প‌ড়ে‌ছিল। টাকার অভা‌বে আর চি‌কিৎসা নেওয়া হয়‌নি। তাই তি‌নি এখন দেখ‌তে পায় না। সক‌লের খাবার নি‌শ্চিত ক‌রে শোয়ার প্রস্তু‌তি নি‌তে হয়। রা‌তে ক‌নির সা‌থে গল্প কর‌তে কর‌তে ঘুমায়। ক‌নি সারা‌দি‌নের জমা‌নো কথা রা‌তে গল্প আকা‌রে পেশ ক‌রে। এই নিয়‌মে ভালই চল‌ছি‌লো নীলুর জীবন। পর‌দিন সকা‌লে নীলু বের হ‌লো, কা‌জে যা‌চ্ছে। কিছু দূর যাওয়ার পর নীলু দেখ‌তে পেল সেই ছে‌লেটা‌কে। নিথর দৃ‌ষ্টি‌তে তা‌কি‌য়ে আ‌ছে তার দি‌কে। নীলু একটু ভয় পে‌য়ে গেল। না দেখার মত ক‌রে এ‌ড়ি‌য়ে চ‌লে গেল। এই ছে‌লেটার নাম কৈলাশ। পাড়ার বাজা‌রে একটা হো‌টে‌লের মে‌ছিয়ার। সারা‌দিন গা‌লি শু‌নে দিন পার কর‌লেও মুখ দি‌য়ে তার একটা গা‌লিও বের হয় না কখ‌নো। ছোট বেলায় বাবা কে হা‌রি‌য়ে‌ছে। তারপর বড় হ‌য়ে‌ছে মা‌য়ের সা‌থে। মা‌য়ের খুব আদ‌রের ছে‌লে। খুব শান্ত স্বভাবের। একটু ভিতুও ব‌টে। ফ‌কিন্নী পাড়ায় সাবাই খুব পছন্দ ক‌রে ছে‌লে‌টি‌কে। ওই দিন বি‌কে‌লে রাস্তা পার হওয়ার সময় নীলু কে তার চো‌খে প‌রে। নীলুর চোখ জোড়া দে‌খেই আর চোখ ফেরা‌তে পা‌রে‌নি কৈলাশ। সে শুধু নীলুর এব‌ড়ো থেব‌ড়ো ভ্রু‌য়ের নি‌চে আল‌তো ক‌রে পলক ফেল‌তে থাকা মায়বী চোখ জোড়া দেখ‌ছি। কি অপূর্ব। এর আ‌গে সে কখ‌নো দে‌খে‌নি। এরপরই সে পিছু নি‌য়ে‌ছিল কোথায় থা‌কে তা জানার জন‌্য।

ডি‌প্রেশন ট‌্যাব‌লেট

পর্ব-৩

এরপরই সে পিছু নি‌য়ে‌ছিল কোথায় থা‌কে তা জানার জন‌্য। কৈলাশ ওই রা‌তেই পন কর‌লো সে নীলু‌কে চো‌খে চো‌খে রাখ‌বে। কৈলাশ ঠিক কর‌লো আজ বি‌কে‌লে সে আবার নীলু‌কে দেখ‌তে যা‌বে। যেই ভাবা সেই কাজ। বি‌কে‌লে ঠিক রাস্তার অপর পা‌শে দা‌ড়ি‌য়ে আ‌ছে। ময়লা জামা এবং প‌্যান্ট প‌রি‌হিত। নীলু রাস্তা পার হ‌বে তখ‌নি তার চো‌খে পড়‌লো গত কাল‌কের সেই ছে‌লে‌টি আবা‌রো দা‌ড়ি‌য়ে আ‌ছে। এক নজ‌রে নিথর দৃ‌ষ্টি‌তে তা‌কি‌য়ে আ‌ছে। নীলু রাস্তা পার হ‌য়ে বা‌ড়ির দি‌কে হাঁটতে লাগ‌লো। আজ বা‌ড়ি পৌঁ‌ছে কেন জা‌নি খুব অ‌স্থির লাগ‌ছি‌লো নীলুর। ক‌নি চেহারা দে‌খেই বু‌ঝে ফেল‌লো।

ক‌নিঃ কি‌রে আপু ?? তোমার মুখটা এমন শুখনা লাগ‌ছে কেন ? কি হ‌য়ে‌ছে ?
নীলুঃ কিছু না। একটু ভয় পে‌য়ে‌ছিলাম।

ক‌নিঃ কেন‌রে ?? কি হ‌য়ে‌ছে ?? কুকুর দে‌খে‌ছিলা ??
নীলুঃ আ‌রে না।

ক‌নিঃ তো ? কি হল ?
নীলুঃ গত ২ দিন ধ‌রে একটা ছে‌লে আমার পিছু কর‌ছে। মেন‌রো‌ডের রাস্তা পার হওয়ার সময় দে‌খি ছে‌লেটা দা‌ড়ি‌য়ে থা‌কে। এক দৃ‌ষ্টি‌তে তা‌কি‌য়ে থা‌কে।

ক‌নিঃ টিজ ক‌রে ??
নীলুঃ নাহ। শুধু তা‌কি‌য়ে থা‌কে।

ক‌নিঃ হই‌ছে বু‌জে‌ছি। প্রেমে পর‌ছে। পোলারা এমনই। তুমি কিন্তু একদম পাত্তা দি‌ওো না।
নীলুঃ হুম।

ফ্রেশ হ‌য়ে বিশ্রাম নি‌তে লাগ‌লো নীলু। চোখ বুজ‌তেই  ছে‌লেটার নীল চোখ জোড়ার চেহারা ভে‌সে উঠ‌লো। নীলু উ‌ঠে চ‌লে গেল রান্না ঘ‌রে। রাতে নীলু ঘু‌মো‌তে পার‌লো না। শেষ রা‌তের পর অ‌নিচ্ছ‌কৃত ঘুম চ‌লে এ‌লো।
সকা‌লে যথারী‌তি কা‌জে চ‌লে গেল নীলু। কৈলা‌শের কোন কা‌জে মন বস‌ছে না। সে আজ প্রতি‌দি‌নের তুলনায় প্রতি কা‌জে বে‌শি গা‌লি খা‌চ্ছে। খেয়াল না ক‌রে হাত পু‌ড়ি‌য়ে‌ছে একবার। এভা‌বে পার হ‌তে থা‌কে কিছু‌দিন। নীলু সব ভূ‌লে যাওয়ার চেষ্টা কর‌তে লাগ‌লো। তারপর এক‌দিন নীলু যথারী‌তি কাজ শে‌ষে বাসায় ফির‌ছি‌লো।কিন্তু আজ রাস্তা প‌ার হওয়ার সময় কাউ‌কে দেখ‌তে পে‌লো না। কিছুটা অবাক হ‌ল নীলু। বাসায় চ‌লে এ‌লো নীলু। কেন যেন তার মনটা হাসপাস কর‌ছে। ক‌নি‌কে কিছু ব‌লে‌নি আজ নীলু। রা‌তে নীলুর ঘুম হ‌লো না। পর‌দিন যথারী‌তি কা‌জে গেল নীলু।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন