বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস (World No Tobacco Day)
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস প্রতি বছর ৩১শে মে তারিখে বিশ্বজুড়ে পালন করা হয়। বিশ্বজুড়ে ২৪ ঘণ্টা সময়সীমা ধরে তামাক সেবনের সমস্ত প্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকাতেবিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস প্রতি বছর ৩১শে মে তারিখে বিশ্বজুড়ে পালন করা হয়। বিশ্বজুড়ে ২৪ ঘণ্টা সময়সীমা ধরে তামাক সেবনের সমস্ত প্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকাতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে দিবসটি প্রচলিত হয়েছে।
এছাড়াও দিবসটির উদ্দেশ্য তামাক ব্যবহারের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব এবং স্বাস্থ্যের উপর এর নেতিবাচক প্রভাবের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করানো যা বর্তমানে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিবেচিত এবং যার মধ্যে ধুমপানের পরোক্ষ ধোঁয়ার প্রভাবের কারণে প্রায় ৬,০০,০০০ অ-ধূমপায়ী ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সদস্য রাষ্ট্রসমূহ ১৯৮৭ সালে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস চালু করে। বিগত বিশ বছরে, দিবসটি সরকার, জনস্বাস্থ্য সংগঠন, ধূমপায়ী, উৎপাদনকারী, এবং তামাক শিল্পের কাছ থেকে উদ্যম এবং প্রতিরোধ উভয়ের মাধ্যমে বিশ্বজূড়ে পালিত হয়ে আসছে।
এছাড়াও দিবসটির উদ্দেশ্য তামাক ব্যবহারের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব এবং স্বাস্থ্যের উপর এর নেতিবাচক প্রভাবের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করানো যা বর্তমানে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিবেচিত এবং যার মধ্যে ধুমপানের পরোক্ষ ধোঁয়ার প্রভাবের কারণে প্রায় ৬,০০,০০০ অ-ধূমপায়ী ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সদস্য রাষ্ট্রসমূহ ১৯৮৭ সালে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস চালু করে। বিগত বিশ বছরে, দিবসটি সরকার, জনস্বাস্থ্য সংগঠন, ধূমপায়ী, উৎপাদনকারী, এবং তামাক শিল্পের কাছ থেকে উদ্যম এবং প্রতিরোধ উভয়ের মাধ্যমে বিশ্বজূড়ে পালিত হয়ে আসছে।
.
এবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে “Protecting youth from industry manipulation and preventing them from tobacco and nicotine use” । “তামাক কোম্পানির কূট কৌশল থেকে তরুণদের রক্ষা করে তামাক ও নিকোটিন ব্যবহার থেকে বিরত রাখুন। ”ডব্লিউএনটিডি এর থিম হল "তরুণদের শিল্প ব্যবহার থেকে রক্ষা করা এবং তামাক ও নিকোটিন ব্যবহার থেকে বিরত রাখা ।"
.
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা পরিচালিত আটটি বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য প্রচারাভিযানের মধ্যে একটি, অন্যান্য দিবসগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস, বিশ্ব রক্তদাতা দিবস, বিশ্ব টিকা সপ্তাহ, বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস, বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস, বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস, এবং বিশ্ব এইডস দিবস।
🔵🔴
.
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস আজ। বাংলাদেশে প্রতিবছরের মতো এবারও উদযাপিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস।
.
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর সারা বিশ্বে ২০ লক্ষ মানুষ তামাক ব্যবহারের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। বাংলাদেশের হৃদরোগজনিত মৃত্যুর ৩০ শতাংশের জন্যেই দায়ি ধূমপান তথা তামাক ব্যবহার,যা খুবই আশংকাজনক।বর্তমান বিশ্বে হার্ট অ্যাটাক হলো প্রধান প্রাণঘাতী রোগ। মুহূর্র্তের মধ্যে ছোবল মেরে নিয়ে যায় একটি জীবন। স্পষ্ট বোঝা যায় কী মারাত্মক এ হার্ট অ্যাটাক নামক ঘাতক ব্যাধিটি। এ হার্ট অ্যাটাকের যদিও অনেক কারণ রয়েছে তবুও ধূমপান করলে হার্ট অ্যাটাক হয়ে মরার ঝুঁকি থাকে বেশি। উচ্চ রক্তচাপের জন্যও ধূমপান কোনো কোনো ক্ষেত্রে দায়ী বলে বিবেচিত। তামাক ব্যবহারজনিত রোগ ও মৃত্যু এখন আতংক। আমাদের দেশের জন্যে একটি বড় রকমের চ্যালেঞ্জ ।বিশেষজ্ঞরা জানান, তামাকের কারণে পৃথিবীতে প্রতিবছর ৭০ লক্ষাধিক মানুষ অকালে মারা যায়। টোব্যাকো অ্যাটলাসের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত অসুখে মৃত্যুবরণ করে।
.
তামাকের নেতিবাচক প্রভাবগুলি বিশেষ করে ফুসফুসের ওপর সচেতনতা বাড়ানোর জন্য একটি প্রচারণা সংগঠিত করবে। এটি ফুসফুসের গুরুত্ব এবং একজন ব্যক্তির সার্বিক সুবিধার জন্য এটি কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা নিয়ে এবারের তামাক দিবসে স্থান পেয়েছে। দেশের ৯০% লোকের ধারণা তামাক পণ্য সেবনে স্ট্রোক,হার্ট অ্যাটাক ও ফুসফুসের ক্যানসার হতে পারে।
.
চিকিৎসকদের মতে ,ধূমপানের কুফলে শরীরের প্রায় সব অঙ্গই সরাসরি আক্রান্ত হয়। তবে ফুসফুস এবং হৃদযন্ত্রই বেশি আক্রান্ত হয়। ফুসফুস সংক্রান্ত রোগের মধ্যে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস অন্যতম।এ রোগটির অনেক কারণ রয়েছে। তবুও ধূমপান হচ্ছে এর প্রধানতম কারণ। ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসে ভোগা একজন ধূমপায়ী হারিয়ে ফেলে তার প্রাণশক্তি। সারা দিন কাশি আর শ্বাসকষ্ট লেগেই থাকে। এভাবে যে কত শ্রম দিবস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
.
পুরুষদের ৪৬% মানুষই সিগারেট,বিড়ি,জর্দা বা অন্যকোনো তামাক জাত পণ্য ব্যবহার করছেন। মহিলাদের ক্ষেত্রে এর হার ২৫%। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য মতে,দেশের প্রাপ্তবয়স্ক ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক সেবী।
.
‘ইউনাইটেড ফোরাম এগেইন্সট টোবাকো’র সাংগঠনিক সম্পাদক ও ‘ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ’এর অধ্যাপক ডা, সোহেল রেজা চৌধুরী একটি গবেষনা প্রতিবেদন উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশে ৪৩ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৪ কোটি ১৩ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করেন, যার মধ্যে ২৩ ভাগ (২ কোটি ১৯ লক্ষ) ধূমপানের মাধ্যমে তামাক ব্যবহার করেন এবং ২৭.২ভাগ (২ কোটি ৫৯ লক্ষ) ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন।
.
তিনি বলেন, গবেষনায় দেখা গেছে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের হার নারীদের মধ্যে অনেক বেশি। বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সের প্রায় ৭ভাগ (পরিসংখ্যান, ২০১৩) কিশোর-কিশোরী তামাক ব্যবহার করে। এছাড়াও তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লক্ষ ( ২০১৩) মানুষ অকাল মৃত্যু বরণ করে।
.
🔵 বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, তামাকখাত থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায় তামাক ব্যবহারের কারণে অসুস্থ রোগীর চিকিৎসায় সরকারকে স্বাস্থ্যখাতে তার দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় করতে হয়। তামাকজনিত মোট ক্ষয়ক্ষতি হিসেব করলে তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৩ শতাংশ। তাই দেশের সম্পদকে বাঁচাতে হলে, আসুন তামাককে না বলি।
.
🔴এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তামাকবিরোধী সংগঠন প্রগতির জন্য জ্ঞান ‘প্রজ্ঞা’র পক্ষ থেকে বলা হয়, “তামাকের নেশার ছোবল পৃথিবীতে প্রতি ৬ সেকেন্ডের কম সময়ে একজন মারা যায়। তামাক মহামারিতে এভাবে প্রতি বছর মৃত্যুসংখ্যা ৭০ লাখ। পরোক্ষ ধূমপানে মৃত্যুবরণ করে আরো নয় লাখ অধূমপায়ী মানুষ।”
সেখানে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৫ সালের তথ্য মতে, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ বা হৃদরোগ বিশ্বের মোট মৃত্যুর একক কারণ হিসেবে শীর্ষে রয়েছে।
.
“বিশ্বব্যাপী মোট মৃত্যুর প্রায় ৩১ শতাংশই হৃদরোগজনিত মৃত্যু। এর এক-তৃতীয়াংশই ঘটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। এই হৃদরোগজনিত মৃত্যুর প্রায় ১২ শতাংশের জন্য দায়ী তামাক ব্যবহার এবং পরোক্ষ ধূমপান।”
.
বর্তমানে বিশ্বে মোট তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১ বিলিয়ন, যার ৮০ শতাংশই বসবাস করে নিম্ন বা মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বলেও জানানো হয়।
.
ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্র সংক্রান্ত অসুস্থতা বিশ্বব্যাপী অকাল মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ এবং গোটা বিশ্বে মৃত্যুর পাঁচটি শীর্ষস্থানীয় কারণের মধ্যে দু’টিই ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্র সংক্রান্ত জটিলতা বলে জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। এতে বলা হয়, তামাক ব্যবহার ও পরোক্ষ ধূমপান ফুসফুসের বিভিন্ন রোগের প্রধানতম কারণ। এসব রোগের মধ্যে রয়েছে, ফুসফুস ক্যানসার, ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিস (সিওপিডি), যক্ষ্মা ও অ্যাজমা।
.
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১০ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ, যা একইসঙ্গে তামাক ব্যবহারজনিত মোট মৃত্যুর ২৮ শতাংশের জন্য দায়ী। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, বাংলাদেশে শিশু যক্ষ্মা রোগী পাওয়ার হার দ্রুত বাড়ছে। ২০১৭ সালে এই হার বেড়ে ৪.৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ২০১৩ সালে ছিল মাত্র ২.৮ শতাংশ।
🔵🔴⭐🔺 সাম্প্রতিক গবেষণায় রাজধানী ঢাকার প্রাথমিক স্কুলে পড়া ৯৫ শতাংশ শিশুর দেহে উচ্চমাত্রার নিকোটিন পাওয়া গেছে, যার মূল কারণ পরোক্ষ ধূমপান। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ অনুযায়ী বাংলাদেশে এখনও ৩ কোটি ৭৮ লাখ (৩৫.৩%) প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করে। কর্মক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয় ৮১ লাখ মানুষ। এমনকি বাড়িতেই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে ৪ কোটি ৮ লাখ মানুষ এবং এক্ষেত্রে নারীরা আক্রান্ত হচ্ছে অনেক বেশি।
.
এ বিষয়ে তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, কার্যকর কর ও মূল্য পদক্ষেপের অভাবে বাংলাদেশে তামাকপণ্যের দাম অত্যন্ত কম। ফলে দেশের তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী খুব সহজেই তামাক ব্যবহার শুরু করতে পারে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যই আসন্ন বাজেটে কার্যকর করারোপের মাধ্যমে তামাকপণ্যের দাম জনগণ, বিশেষ করে তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে হবে।
.
পরোক্ষ ধূমপানের কারণে ঢাকার স্কুলপড়ুয়া শিশুদের ৯৫ শতাংশের দেহে উচ্চ মাত্রার নিকোটিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে একটি গবেষণার বরাত দিয়ে জানিয়েছে তামাকবিরোধী সংগঠন প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা)।এক বিবৃতিতে পরোক্ষ ধূমপানের কারণে শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি তুলে ধরেছে তারা।
প্রজ্ঞার বিবৃতিতে বলা হয়, “তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষ মারা যায়। আর পরোক্ষ ধূমপানের কারণে মারা যায় ১০ লাখ মানুষ, যার বড় একটি অংশ শিশু।
.
“ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্র সংক্রান্ত অসুস্থতা বিশ্বব্যাপী অকাল মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ এবং গোটা বিশ্বে মৃত্যুর ৫টি শীর্ষস্থানীয় কারণের মধ্যে ২টিই ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্র সংক্রান্ত জটিলতা।”
.
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসকে সামনে রেখে ফুসফুসের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকপণ্যের দাম বাড়িয়ে ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার আহ্বান জানিয়েছে প্রজ্ঞা।
.
গৃহস্থালি, কর্মস্থল, গণপরিবহনসহ সব ধরনের পাবলিক প্লেসে পরোক্ষ ধূমপানের প্রকোপ কমানো না গেলে ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্র সংক্রান্ত জটিলতা এবং মৃত্যু হ্রাস করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন তিনি।
.
“এক্ষেত্রে সকল পাবলিক প্লেস থেকে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করাসহ বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ বাস্তবায়নের মাধ্যমে তামাক কোম্পানির আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে,” বলেন জুবায়ের।
.
গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০০৯ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৫ থেকে ৬৪ বছরের বয়স্কদের মধ্যে শতকরা ৪৩.৪ ভাগ অর্থ্যাৎ চার কোটি ৩০ লাখ মানুষ তামাক সেবন করে। আর পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন প্রায় সাড়ে চার কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ।
.
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ বুলেটিন ২০১৭ অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৬ সময়কালে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৪১.৩ শতাংশ।
.
সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দ্য ইন্সটিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের (আইএইচএমই) সর্বশেষ তথ্য থেকে জানানো হয়, ২০০৫ থেকে ২০১৬ সময়কালে বাংলাদেশে অকাল মৃত্যুর কারণের তালিকায় হৃদরোগ সপ্তম স্থান থেকে প্রথম স্থানে উঠে এসেছে। এই পরিবর্তনের হার ৫২.৭ শতাংশ।
.
“আর এই মৃত্যুর জন্য দায়ী তামাকের অবস্থান চতুর্থ।”
.
🔵🔴⭐🔺 দেশে তামাক ও তামাকজাতদ্রব্য গ্রহণের কারণে প্রতিদিন ২৭৭ জন মানুষের মৃত্যু ঘটে। কেউ যদি দিনে একটি করে সিগারেট খায় তাহলে তার হৃদরোগের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বেড়ে যায় বলে জানিয়েছে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা-মানস।
.
সংবাদ সম্মেলনে মানস’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড এবং জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্সের সদস্য অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, প্রতি এক হাজার টন তামাক উৎপাদনে এক হাজার জন মানুষ মারা যান। তামাকের কারণে দেশে ক্যান্সারে ভুগছে ১৩-১৪ লাখ মানুষ। প্রতিবছর ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে আড়াই লাখ মানুষ। যার মধ্যে মারা যাচ্ছে দুই লাখ মানুষ। মুখ গহ্বর, স্বরযন্ত্র, জিহ্বা ও ফুসফুস ক্যান্সারে প্রায় ৫০ ভাগের জন্যই দায়ী তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য সেবন।
.
তিনি বলেন, ২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি দ্বিগুণ, স্ট্রোকের ঝুঁকি তিনগুণ এবং বুক ব্যথার ঝুঁকি ২০ গুণ বেশি থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, দেশে হৃদরোগজনিত মৃত্যুর ৩০ শতাংশ দায়ী ধূমপান তথা তামাক ব্যবহার।
.
অরূপরতন চৌধুরী বলেন, টোব্যাকো অ্যাটলাসের ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী মধ্যম সারির মানব উন্নয়ন সূচকে অবস্থানকারী অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যুর হার ২৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি।
.
১৯৭৮ সালে প্রথমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাক ও তামাকজাত এবং সিগারেট বা বিড়ি সেবনের ক্ষতিকর দিবসটির প্রতি নজরে আনে। সে বছর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তামাকমুক্ত দিবস পালিত হয়ে আসছে।
.
দেশে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সূত্র মতে,বাংলাদেশে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবেেহরর কারণে প্রতিবছর এক লাখ মানুষ মারা যায় । প্রতিবছর ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ পঙ্গ্গুুত্ব বরণ করে । ১২ লাখ মানুষ প্রতিবছর তামাকজনিত ব্যবহারের ফলে ক্যান্সার,স্ট্রোক,হৃদরোগ, অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট,লিভার ক্যান্সার ইত্যাদি জটিলরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মাত্র ২৫% মানুষ চিকিৎসা সেবার হাসপাতালে যায়।
.
আমাদের দেশে পরোক্ষভাবে ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ ধূমপানের শিকার। এর মধ্যে ১ কোটি নারী। কর্মক্ষেত্রে ৬৩% ও পাবলিক প্লেসে ৪৫% মানুষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। শুধু হোটেল ,রেস্তোঁরা ও চায়ের দোকানগুলিতে ২ কোটি ৫৮ লাখ মানুষ পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার হতে হচ্ছে।
.
প্রাপ্ত সূত্র মতে,দেশে দৈনিক কম হলেও ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা ও বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সিগারেট বা বিড়ি বিক্রি হয়। এ বিক্রিত অর্থে বাংলাদেশের ৫ বছরের নিচে ৭০ লাখ অপুষ্টিতে ভুগছে এমন শিশুদেরকে দৈনিক এক গ্লাস করে দুধ পান করানো সম্ভব অথবা ১ কোটি ৫০ লাখ অভুক্ত মানুষের ৪ শ’ক্যালোরি খাবার দেয়া সম্ভব।
.
বাংলাদেশে সাদাপাতা, গুল, খৈনী, জর্দা, প্রভৃতি তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমলেও সিগারেটের ব্যবহার কমেনি বরং বেড়েছ। সারা বিশ্বে গড়ে ৩১% পুরষ মানুষ ধূমপান করলেও বাংলাদেশে পুরষদের ধূমপানের মাত্রা ৩৭% যা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। বিভিন্ন ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারের এই তারতম্যকে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর উচ্চহারে শুল্কারোপকে দায়ী করা হয়েছে, যা মূলত নিম্নবিত্ত মানুষকেই আঘাত করে। এখন এটা মনে করা হচ্ছে যে ২০০৫ সালের ধূমপান বিরোধী আইন ও তৎপরবর্তী সংশোধিত ধূমপান নিয়ন্ত্রণ আইন থেকে আমাদের এখনও অনেক কিছু পাওয়া বাকী।
.
🔵🔴⭐🔺 জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ সম্মেলনে বিশ্বনেতারা ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ১৬৯টি প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছে।
.
বাংলাদেশ ২০০৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রণীত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-এর প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ এবং সবচেয়ে আগে অনুস্বাক্ষরকারী দেশগুলোর অন্যতম।
.
তাই এফসিটিসির আলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা বাংলাদেশের জন্য ছিল একটি আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা। বাংলাদেশ সে দায়বদ্ধতা পূরণের চেষ্টা করে ২০০৫ সালে একটি আইন প্রণয়নের মাধ্যমে। কিন্তু ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫’-এ অনেকগুলো দুর্বলতা থাকায় আইনটি তামাক নিয়ন্ত্রণে খুব একটা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি। সে কারণে তামাকবিরোধীরা আইনটি সংশোধনের দাবি করে আসছিলেন এবং সরকার সে দাবি মানতে বাধ্য হন। যদিও সংশোধনীটি তামাকবিরোধীদের পুরোপুরি সন্তুষ্ট করতি পারেনি, তথাপি এটিকে তামাক নিয়ন্ত্রণে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলে গণ্য করা যায়।
.
“যার মধ্যে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) বাস্তবায়ন ও অসংক্রামক রোগজনিত অকালমৃত্যু এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস অন্যতম। প্রতিবছর ১ লক্ষ মানুষের অকাল মৃত্যু, প্রায় ৪ লক্ষ মানুষের পঙ্গুত্ব এবং তামাকের অন্যান্য বহুমাত্রিক ক্ষয়ক্ষতি কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে না পারলে এসডিজির তৃতীয় লক্ষ্যমাত্রাসহ অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা কাঙ্ক্ষিত সময়ে অর্জন করা সম্ভব হবে না।”
.
🔵 প্রজ্ঞা বলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারকারী পরিবারগুলোর মাসিক খরচের ৫ শতাংশ তামাক ব্যবহারে এবং ১০ শতাংশ তামাক ব্যবহারজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যয় হয়। আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বে তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যুর পরিমাণ বছরে ৮০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে এবং এই মৃত্যুভারের ৮০ ভাগই বহন করতে হবে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে।
.
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রজ্ঞা জানায়, ২০১১ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে তামাক চাষের জমি তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে তামাক ব্যবহার না করেও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে প্রায় এক কোটি নারী।
.
প্রতি বছর পৃথিবীতে ৬০ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে তামাকের কারণে এবং বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে মৃত্যুর এ সংখ্যা ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে ৮০ লাখে দাঁড়াবে। বাংলাদেশে ধূমপানজনিত প্রধান আটটি রোগে প্রতি বছর প্রায় ৫৭ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। তদুপরি ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেন তামাকজনিত রোগে। প্রতি বছর যে ১২ লাখ মানুষ তামাকজনিত রোগে ভোগেন তাদের চিকিৎসাব্যয় বিপুল।
.
এ সংখ্যাগুলো ২০০৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি গবেষণায় পাওয়া যায়। গত কয়েক বছরে এদেশে তামাকসেবনের হার যেভাবে বেড়েছে তাতে নিশ্চিত করে বলা যায় যে মৃত্যু, অসুস্থতা ও পঙ্গুত্বের উপরোক্ত সংখ্যাগুলো বর্তমানে আরও অনেক বড়। বাংলাদেশে তামাকসেবনের হার বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ। দেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৪৩ শতাংশ কোনো না কোনো তামাকসেবন করেন- ধোঁয়াযুক্ত কিংবা ধোঁয়াবিহীন।
.
পরোক্ষ ধূমপানের হারও বাংলাদেশে বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ; ৬৩ শতাংশ মানুষ কর্মক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। এসব তথ্য বাংলাদেশে তামাকের বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির প্রমাণ দেয়। অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ এ খাত থেকে অর্জিত আয়ের চেয়ে অনেক বেশি।
.
তামাক ব্যবহার কমাতে বিশ্বের ৭৭ টি দেশে এরইমধ্যে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা দেয়া শুরু করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রকাশ্য ধূমপান নিষিদ্ধ করেছেন। সুইডেনে সর্বপ্রথম প্রকাশ্য ধূমপান নিষিদ্ধ ঘোষণা দেয়া হয় । কিছুদিন পূর্বে উগান্ডায় প্রকাশ্য ধূমপান নিষিদ্ধ করে।
.
বাংলাদেশেও প্রকাশ্য ও শিশুদের সামনে বা পাশে ধূমপান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার মিডিয়াতে সকল প্রকার চকলাদার তামাক,তামাকজাত পণ্য ও সিগারেটের বিজ্ঞাপন প্রচার নিষিদ্ধ করেছে । আইনের মাধ্যমে প্রকাশ্য একজন ধূমপায়ীকে ১শ’টাকা জরিমানা ও ৩ মাস জেল দেয়ার বিধান করা হয়েছে । কিন্তু তা বাস্তবায়নে পিঁছিয়ে আছে সরকার।
.
“তামাক কোম্পানির কূট-কৌশল প্রতিহত করুন; তরুণদের তামাক ও নিকোটিন ব্যবহার থেকে বিরত রাখুন।” আওয়াজ তুলুন যার যার অবস্থান থেকে।
.
দেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠী বয়সে তরুণ। তামাক কোম্পানিগুলোর প্রলোভনে যে তরুণরা ধূমপান শুরু করে, তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ধূমপানের মাধ্যমে অন্যান্য নেশায় ধাবিত হচ্ছে। সুনাগরিক হিসাবে গড়ে উঠতে ও স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য তরুণদের নেশা থেকে দুরে থাকা ও ইতিবাচক কাজে সক্রিয় রাখা জরুরী।
.
দিবসটি উদযাপনের অংশ হিসাবে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, এইড ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স, টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত উক্ত ক্যাম্পেইনে দেশব্যাপী জোটভুক্ত সংগঠনসমূহ, বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা কাম্য।।
.
🔵🔴⭐
.
আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তামাক কোম্পানিকে প্রতিহত করতে হবে। এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
.
এফসিটির আর্টিকেল ১৩ অনুসারে সদস্য দেশগুলো তামাকের সব ধরনের বিজ্ঞাপন, প্রচারণা, প্রণোদনা ও পৃষ্ঠপোষকতা নিষিদ্ধ করবে। আর্টিকেল ১৩-তে স্পষ্ট বলা হয়েছে: “প্রত্যেকটি সদস্য দেশ তার নিজ দেশের সংবিধান বা সাংবিধানিক মূলনীতির আলোকে তামাকের সব ধরনের বিজ্ঞাপণ, প্রণোদনা ও পৃষ্ঠপোষকতা নিষিদ্ধ করবে।” এরপর বলা হয়েছে সদস্য দেশগুলো ন্যূনতম কোন কোন পদক্ষেপ এ উদ্দেশ্যে গ্রহণ করবে। আর্টিকেল ১৩-র গাইডলাইনে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলোর বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
.
কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন দেশে গৃহীত এ সংক্রান্ত নীতি-পদক্ষেপের ফাঁক-ফোকর ব্যবহার করে তামাকের প্রচারণা করছে অত্যন্ত সুচতুরভাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, “মানুষের মৃত্যু ঘটায় এমন একটি পণ্যকে বিক্রি করার জন্য অসাধারণ বিপনন দক্ষতার প্রয়োজন। তামাক উৎপাদকারীরা পৃথিবীর সবচেয়ে দক্ষ বিপননকারীদের মধ্যে অন্যতম এবং তামাকের বিজ্ঞাপন, প্রণোদনা ও পৃষ্ঠপোষকতা নিষিদ্ধের যে প্রয়াস গ্রহণ করা হচ্ছে তামাকের ব্যবহার কমানোর জন্য, তা পাশ কাটানোর জন্য তারা ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ। যেহেতু অনেক দেশ এখনও তামাকের বিজ্ঞাপন, প্রণোদনা ও পৃষ্ঠপোষকতা কেবল আংশিকভাবে নিষিদ্ধ করতে পেরেছে, তামাক কোম্পানিগুলো অত্যন্ত সৃজনশীল উপায়ে সে নিষেধাজ্ঞার দুর্বলতাগুলো ব্যবহার করে তাদের পণ্যের প্রসার ঘটিয়ে যাচ্ছে।’’
.
বাংলাদেশে ২০০৫ সালের আইনে তামাকের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হলেও সেটি ছিল আংশিক নিষেধাজ্ঞা যার মধ্যে অনেকগুলো ফাঁক-ফোকর ছিল। তামাক কোম্পানিগুলো অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে সেসব ফাঁক-ফোকর ব্যবহার করেছে। তাদের একটি বড় কৌশল ছিল তামাকপণ্যের বিক্রয়কেন্দ্রে বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা। আগের আইনটিতে যেহেতু সীমিত আকারে তামাকপণ্যের প্রচারণার সুযোগ ছিল, সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে কোম্পানিগুলো প্রত্যেকটি দোকানকে তামাকের বিজ্ঞাপনের একেটি বড় মাধ্যমে পরিণত করেছে। তাছাড়া গণমাধ্যমে তামাকের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা বিভিন্ন উপায়ে পরোক্ষ বিজ্ঞাপন ও প্রাচারণা চালাতে থাকে এবং এ ক্ষেত্রে তাদের অন্যমত টার্গেট অপ্রাপ্তবয়স্ক তরুণ-তরুণীরা।
.
তামাক কোম্পানিগুলোর আরেকটি পরিচিত কৌশল হচ্ছে ‘ব্র্যান্ড স্টেচিং’, অর্থাৎ তামাকপণ্যের নামে অন্যান্য পণ্যের নামকরণ, যেমন টি-শার্ট, টুপি, চাবির রিং, মোবাইল ফোনের মোড়ক, জ্যাকেট, দিয়াশলাই ইত্যাদি। এছাড়া কোম্পানিগুলো ক্রেতাদের কাছে সরাসরি পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিয়ে থাকে।
.
পৃষ্ঠপোষকতাও তামাকের প্রচারণার একটি অন্যতম উপায়। বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা পুরস্কার প্রদান বাংলাদেশে তামাক কোম্পানিগুলোর পরিচিতি কৌশল। তাছাড়া সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির নামে তামাক কোম্পানিগুলো তাদের নামপ্রচারের আরেকটি বড় সুযোগ পেয়ে যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তামাক কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা’ কর্মসূচির বড় বড় বিজ্ঞাপন দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতায় ছাপা হতে দেখা গেছে।
.
এসব সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, সৌরবিদ্যুত, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কয়েকটি অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তামাক কোম্পানিগুলো যত টাকা সামাজিক দায়বদ্ধতার নামে খরচ করে তার চেয়ে ঢের বেশি খরচ করে তা প্রচারের জন্য।
.
তামাক কোম্পানিগুলোর এসব কূটকৌশল রোধ করার জন্য ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৩’-তে বেশ কিছু শক্ত পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সংশোধিত আইনে তামাকের বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্যের যে কোনো ধরনের প্রচারণা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তামাক কোম্পানি কর্তৃক সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির প্রচারণার উপর শক্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যার ফলে তামাক কোম্পানিগুলো জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করলেও তা প্রচারে কোম্পানির নাম, সাইন, ট্রেডমার্ক বা প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে না।
.
এছাড়া সিনেমা, টেলিভিশন, রেডিও, ইন্টারনেট, মঞ্চ অনুষ্ঠান বা গণমাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য প্রচারে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আঠারো বছরের কমবয়সী ছেলেমেদের কাছে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয় এবং তাদের তামাকজাত দ্রব্যের বিপনন বা বিতরণকাজে ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
.
সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট, মোড়ক, কার্টন বা কৌটার উভয় পাশে বা মূল প্রদর্শনী তলের উপরিভাগে শতকরা ৫০ শতাংশ জায়গা জুড়ে তামাক ব্যবহারের ক্ষতিসম্পর্কিত সচিত্র সতর্কবাণী ছাপানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট, মোড়ক, কার্টন বা কৌটায় বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী ব্র্যান্ড এলিমেন্ট (যেমন লাইট, মাইল্ড, লো-টার, এক্সট্রা, আল্ট্রা- এসব শব্দ) ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
.
তবে কেবল আইন প্রণয়নই নয়, তার যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। অন্যথায় একটি শক্তিশালী আইনও অকার্যকর হয়ে পড়ে থাকতে পারে। যে কোনো আইন ততটাই শক্তিশালী যতটা এর প্রয়োগ হয়। তাই সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
.
🔵🔴⭐
.
বিড়ি কোম্পানিগুলো বলে থাকে যে, বিড়ি কারখানাগুলোতে নাকি ২৫ লক্ষ শ্রমিক। বিড়ি কারখানায় যদি এত শ্রমিকই হয় তাহলে বাংলাদেশে আসলে শ্রমিক কতজন–এরকম কোন প্রশ্ন আমাদের কোন সংসদ সদস্যের মধ্যে প্রশ্নও জাগে না। এসব সংসদ সদস্য সরকারী হলেও এরা সরকারী পরিসংখ্যানও যাচাই করেন না। সরকারি পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ২,৬৬,৮১৮ জন শ্রমিক বিড়ি কারখানায় কর্মরত। কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা আরও কম। এ বছর সাংবাদিক আমিন আল রশীদ ও সুশান্ত সিনহা’র উদ্যোগে পরিচালিত “বিড়ি: মিথ ও বাস্তবতা” শীর্ষক গবেষণায় আমরা জানলাম বিড়ি কারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা মাত্র ৬০ হাজার।
.
শুধু সংখ্যা বিবেচনাই যথেষ্ট নয়। বিড়ি কারখানার পরিবেশ অমানবিক। শ্রমের মুল্যও যৎসামান্য। শ্রমমূল্য ও কাজের পরিবেশ বিবেচনায় বিড়ি কারখানায় কাজ করাটা দেশের সর্বাধিক ঝুঁকিপুর্ণ পেশা। তাই অবিলম্বে শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থান করা দরকার। এজন্য বিড়ির উপর কর বাড়ানো দরকার। তাছাড়া বাংলাদেশে কম মূল্যে বিড়ি পাওয়া যায় বলে দরিদ্র মানুষের মধ্যে নেশার প্রবণতা বেশি। এদেশে যত কম মূল্যে তামাক পাওয়া যায় পৃথিবীর কোন দেশে এত কম মূল্যে তামাক পাওয়া যায় না। দরিদ্রদের কষ্টার্জিত অর্থের একটা অংশ নেশায় ব্যয় করায় তারা শিশুদের লেখাপড়া বা পুষ্টি চাহিদা মেটাতে পারছে না। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ এর তামাক ও দরিদ্রতা শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়, যদি পরিবারের কর্তারা তামাকের জন্য ব্যয় করা অর্থেও ৬৯ভাগ খাদ্যের জন্য ব্যয় করে তাহলে দেশে অপুষ্টিজনিত মৃত্যু অর্ধেক কমে যাবে।
.
তামাক নিয়ন্ত্রণে যে কয়টি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে কর বৃদ্ধি অন্যতম। তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি এবং কর বৃদ্ধির কারণে মূল্য বৃদ্ধি ঘটলে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমে আসবে–এটা পৃথিবীর বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত। তামাক কোম্পানিগুলো কর বৃদ্ধির বিপক্ষে কিছু ভ্রান্ত যুক্তি তুলে ধরে এবং এসব যুক্তি প্রতিষ্ঠিত করতে তারা কোটি কোটি টাকা খরচও করে। যে কারণে কেউ কেউ প্রকৃত বিষয় না জেনে তামাক কোম্পানির ভাষ্য অনুযায়ী বিভ্রান্ত হন।
.
আশার কথা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ তামাকের উপর কর আরোপ করার জন্য আলাদা একটি সেল গঠিত হয়েছে। এ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে এ বছর প্রায় শতাধিক সংসদ সদস্য তামাকের উপর কর বৃদ্ধির অনুরোধ জানিয়ে অর্থ মন্ত্রী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বরাবর চিঠি দিয়েছে। তবে, মৃত্যুর ফেরিওয়ালা তামাক কোম্পানিগুলোও বসে নেই। তামাক কোম্পানিগুলো এখনও নানা মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতার কাছে তামাক কোম্পানিগুলোর মিথ্যাচার টিকছে না।
.
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় বলা হয়, বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়াসহ তামাকজাত দ্রব্যে ডিডিটি, কার্বন মনোক্সাইড, আর্সেনিক, মিথানল, টার বা আলকাত্রা, নিকোটিনসহ ৪০০০ এর বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যার মধ্যে ৪৩টি সরাসরি ক্যান্সার সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত। ধূমপানের কারণে প্রতি ৬ সেকেন্ডে একজন ও প্রতিবছর ৫৪লক্ষ মানুষ পৃথিবীতে মারা যায়।
.
🔵🔴⭐
.
ধূমপানের এ ভয়াবহ ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রণয়ন করেছে আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)। এতে কার্যকরভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য সকল প্রকার প্রচারণা কার্যক্রম নিষিদ্ধ, সব ধরনের পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহন সম্পূর্ণ ধূমপানমুক্ত করা, সিগারেটসহ তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতকীকরণ বাণী প্রদান, তামাক চাষীদের বিকল্প ফসল উৎপাদনে সক্রিয় সহযোগিতা, তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চহারে কর আরোপ ও মূল্য বৃদ্ধি অন্যতম।
.
তামাকের ভয়াবহ দিক থেকে দেশের মানুষকে রক্ষায় সরকার ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ এবং বিধিমালা ২০০৬ প্রণয়ন করেছে। এ আইনের বাস্তবায়ন তামাকের ক্ষতিকর বিষয়ে জনগণকে সচেতন করলেও কার্যকরভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চহারে কর আরোপ ও মূল্য বৃদ্ধি বেশি কার্যকর হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ব ব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক গবেষণায় বলেছে, ১০% মূল্য বৃদ্ধিতে ৪২ মিলিয়ন লোক ধূমপান ত্যাগ করবে এবং উন্নয়নশীল দেশে ৯ মিলিয়ন লোকের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হবে।
.
করবৃদ্ধি করলে রাজস্ব বাড়বে–আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণায় এটি প্রমাণিত। বিড়ি-সিগারেটসহ তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি করলে সরকার ও জনগণ যেভাবে লাভবান হবে। তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি ও এর ফলে মূল্য বৃদ্ধির কারণে ধূমপানের হার কমে আসবে। এতে করে সরকারের স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় কমে আসবে। কারণ মূল্য বাড়লে ধূমপানের হার কমলেও রাজস্ব বৃদ্ধি পায়–এটা থাইল্যান্ড, নরওয়ে, চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লক্ষ্য করা যায়। তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বাড়ালে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। বিশ্ব ব্যাংক ও বিশ্ব স্বা

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন